মাছ চাষে অ্যামোনিয়া এবং অ্যামোনিয়াম
মাছ চাষে অ্যামোনিয়া এবং অ্যামোনিয়াম:
অ্যামোনিয়া (Ammonia, NH₃) এবং অ্যামোনিয়াম (Ammonium, NH₄⁺) নাইট্রোজেন চক্রের গুরুত্বপূর্ণ যৌগ, যা মাছ চাষে পানির গুণমান এবং মাছের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যামোনিয়া (NH₃):
1. প্রকৃতি:
গ্যাসীয় এবং পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।
অত্যন্ত টক্সিক বা বিষাক্ত।
pH এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে এর টক্সিসিটি বাড়ে।
2. উৎপত্তি:
মাছের মূত্র, পচা খাবার, এবং অন্যান্য জৈব পদার্থের পচন থেকে।
মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর বর্জ্য।
3. প্রভাব:
মাছের শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা কমায়।
দীর্ঘমেয়াদে টক্সিক পরিবেশে মাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং মৃত্যুও হতে পারে।
4. বিষাক্ততা
ল্যাবরেটরি পরীক্ষা থেকে মাছ এবং চিংড়িতে অ্যামোনিয়ার বিষাক্ততার অনেক তথ্য রয়েছে যেখানে পিএইচ এবং অ্যামোনিয়া ঘনত্ব স্থির ছিল। LC50 ঘনত্ব (পরীক্ষামূলক প্রাণীদের 50 শতাংশ মারার জন্য প্রয়োজনীয় ঘনত্ব) নিম্নলিখিত রেঞ্জ রয়েছে: ঠাণ্ডা পানির মাছের জন্য 0.3 থেকে 0.9 mg/L; উষ্ণ পানির মাছের জন্য 0.7 থেকে 3.0 mg/L; সামুদ্রিক মাছের জন্য 0.6 থেকে 1.7 mg/L; এবং সামুদ্রিক চিংড়ির জন্য 0.7 থেকে 3.0 mg/L। দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজারের জন্য নিরাপদ ঘনত্ব হল ঠান্ডা জলের মাছের জন্য প্রায় 0.015 থেকে 0.045 এবং উষ্ণ জলের এবং সামুদ্রিক মাছ এবং চিংড়ির জন্য প্রায় 0.05 থেকে 0.15।
5. সীমা:
মাছ চাষে অ্যামোনিয়া স্তর ০.০৫ ppm-এর নিচে থাকা উচিত।
অ্যামোনিয়াম (NH₄⁺):
1. প্রকৃতি:
পানিতে দ্রবীভূত আয়নিক ফর্ম।
অপেক্ষাকৃত কম টক্সিক।
pH কম হলে অ্যামোনিয়া অ্যামোনিয়ামে রূপান্তরিত হয়।
2. প্রভাব:
তুলনামূলক নিরাপদ, তবে উচ্চ ঘনত্বে মাছের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
3. বিষাক্ততা
তেমন বিষাক্ত নয়
3. সীমা:
পিএইচ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এটি অ্যামোনিয়াতে রূপান্তর রোধ করা যায়।
পানির পিএইচ ও তাপমাত্রার ভূমিকা:
1. pH:
উচ্চ pH (৭.৫–৯): অ্যামোনিয়া বেশি টক্সিক।
কম pH (<৭): অ্যামোনিয়াম বেশি এবং অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
2. তাপমাত্রা:
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে অ্যামোনিয়ার টক্সিসিটি বাড়ে।
মাছ চাষে ভূমিকা ও ব্যবস্থাপনা:
1. নাইট্রোজেন চক্র:
অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রাইট (NO₂⁻) এবং নাইট্রাইট থেকে নাইট্রেট (NO₃⁻) গঠিত হয়।
নাইট্রেট মাছের জন্য কম ক্ষতিকর।
2. পানির গুণমান নিয়ন্ত্রণ:
অ্যামোনিয়া এবং অ্যামোনিয়ামের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
pH ৬.৫–৮.০ এবং তাপমাত্রা ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা উচিত।
3. বায়োফিল্টার:
বিশেষ ব্যাকটেরিয়া (Nitrosomonas এবং Nitrobacter) অ্যামোনিয়া এবং নাইট্রাইটকে নাইট্রেটে রূপান্তর করে।
4. পানি পরিবর্তন:
নিয়মিত পানি পরিবর্তন করে অ্যামোনিয়া কমানো যায়।
5. অতিরিক্ত খাদ্য না দেওয়া:
পচনশীল খাদ্য শ্যামোনিয়া বৃদ্ধি করে।
6. অ্যামোনিয়া নিঃসরণের প্রতিরোধ:
এমোনিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য পুকুরে নিয়মিত প্রোবায়োটিক্স ও সেপোনিন ব্যবহার করা যায়।
উপসংহার:
অ্যামোনিয়া ও অ্যামোনিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা মাছ চাষের সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। এগুলোর ভারসাম্য বজায় রেখে মাছের সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা যায়।